কর্তব্য – দেবরাজ দত্ত
Updated: Aug 9, 2019
আড্ডার প্রতি বাঙালীদের যে একটা জন্মগত টান আছে সেটা ভীষণভাবে অনুভব করে বিকাশ। দিনের শেষে অবসর সময়টা বটগাছটার চাতালে ছুটে যাবার জন্য মনটা আনচান করে ওঠে। বিকাশের যাতায়াতটা যদিও খুব বেশি দিনের নয়, মাত্র দু’সপ্তাহ, তবু নিজেকে অনেক দিনের যাত্রী বলে মনে হয়।
গন্তব্য ছিল মূলত ছাত্রের বাড়ী আর ইন্টারভিউ অফিস। আধাশহর আধাগ্রামের আদলে গড়ে ওঠা এই অঞ্চলে আগমন প্রায় বছর দু’বছর হয়ে গেছে। খালি মেসটা পেয়ে যাওয়াতে খুব সুবিধে হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই বিকাশ একটু লাজুক, অপরিচিতের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ঠোঁট দুটো যেন নড়তে চায় না।
এখানে পা রাখার কয়েকদিন পরেই বাড়িওয়ালা এসে বললেন, ” তুমি তো হে, এম.এ. পাশ। চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত কিছু টিউশনি তো করতে পারো”। বিকাশ বলেছিল, ” কোথায় পাবো টিউশনি? আমি তো এখানে একেবারে অপরিচিত”। বাড়ীওয়ালার কৃপায় কয়েকটা টিউশন জুটে গিয়েছিল যা, একটু কৃপণ হলেও সহানুভূতিশীল ছিলেন।
ভবিতব্যের ওপর ভর করে দিন কয়েক আগে বিকাশ একটা ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিল। “বিকাশ দা ভালো তো?”, হঠাৎ স্টেশনের কাছে পিছন থেকে ঘরঘরে গলা শুনতে পেয়ে চমকে উঠল। পিছন ফিরে ছেলেটাকে দেখেও অবাক, ” কী ভাবছেন? আমি কে হে? আমার নাম নবকৃষ্ণ ঘোষ। পাড়ার সবাই ভালোবেসে ডাকে কেষ্ট। আপনার ফেস দেখে মনে হচ্ছে আপনি ব্যস্ত আছেন। আজকের মতো বাই বাই, পরে দেখা হবে”, বলেই পাশের গলিটাতে মিলিয়ে গিয়েছিল।
এরপর ঘনঘন কেষ্টর সাথে দেখা হতে লাগল। একদিন বটগাছতলার আড্ডায় নিয়ে গিয়েছিল। কয়েকদিনেই আড্ডার নেশাটা বিকাশকে বেশ কাবু করে ফেলেছিল।কেষ্টও হয়ে উঠেছিল বিকাশের সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
মালতী প্রায়ই আসে বিকাশের কাছে। ক’মাস পরেই তো হায়ার সেকেন্ডারী। ইংরেজিটা না বুঝলে ভরসা ঐ বিকাশদা। বদলে বিকাশ পায় গাছের ডাঁসা পেয়ারা।
বিকাশ টিউশনি থেকে যখন ফিরছিল, তখন রাত আটটা। চাতালটার কাছাকাছি যেতেই বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। দেখল রতন চাতালে চিৎ হয়ে পড়ে আছে, কপাল বেয়ে অঝোরে রক্ত নেমে আসছে।কে যেন পাশ থেকে বলল, ”কেষ্টর কীর্তি”। বিকাশ হিতাহিত শূন্য হয়ে থানায় গিয়ে ডাইরি করে এল।
বাড়ি ফিরে দেহটা বিছানায় একটু এলিয়ে দিয়েছে। ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলেই ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেল, সামনে দাড়িয়ে মূর্তিমান কেষ্ট। ” আরে গুরু একটা কেস করে ফেলেছি, শালা আমার সামনে তোমার নামে যা খুশী তাই বলবে? বলে কিনা তুমি আর মালতী…একটু ওভার ডোজ দিয়ে ফেলেছি। দেওখে আসি কেসটা ঠান্ডা হল কিনা?” কয়েক মুহূর্ত কী যান ভাবে বিকাশ, দরজাটা দিয়ে ধপ করে বিছেনায় বসল।
রাস্তায় আবার হৈ চৈ। জানালার কপাটটা খুলেই দেখতে পেল কেষ্টকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। পিছনে কৌতূহলীদের ভিড়। হঠাৎ মুখ তুলে জানালার দিকে তাকালো কেষ্ট, আবার মুহূর্তের মধ্যে চোখ নামিয়ে ফেলল। ওর দু’চোখে ক্ষমা না ক্রোধ? ঠিক বুঝতে পারল না বিকাশ।
দেবরাজ দত্ত